Struggle of Mother Teresa in Bengali
"NO matter who say's what,you should accept it with a smile and do your own work"
- Mother Teresa
"কোন বাপ্যার নয় কে কি বলছে তাদের কথা গুলো হাসিমুখে গ্রহণ করে নিজের কাজ করে যাও " - মাদার টেরেসা
ওনার এই একটি কথাই আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায় । ওনার মত একজন মহান মানুষকেও প্রচুর সমালোচনা শুনতে হয়েছে। এমনকি মৃত্যুর পরও । নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকে নিঃশব্দে কাজ করে যে বিশাল মহামানব হওয়া যায় ,সেটা ওনার কর্মজীবন দেখলে খুব সহজে বোঝা যায় । মাদার টেরেসাকে নিয়ে আজ সারা বিশ্বে এত জয়গান, তিনি কি খুব সহজেই এই
সাফল্য পেয়ে গিয়েছিলেন ?
............... না। তাকেও অনেক মানসিক লড়াই করতে হয়েছে সমগ্র বিশ্বের সাথে।
১২ বছরের একটি মেয়ে স্তির করে বড় হয়ে সন্ন্যাসিনী হয়ে মানুষের সেবা করবে। সেই মত ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। এরপর ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন । এই সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux –এর নামানুসারে টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালে কলকাতার লরেটো মিশনারি শিক্ষকতা শুরু করেন।কিন্তু দরিদ্র মানুষের করুন দুর্দশা তাকে প্রচণ্ড কষ্ট দিত । তিনি স্থির করলেন দারিদ্রের সেবাই তার মূল ব্রত হবে । তিনি দরিদ্রদের মাঝে গিয়ে সেবা শুরু করলেন ।
ক্ষুদার্থ মানুষকে খাবার দান, কুষ্ঠ রোগীদের দেহের পুঁজ পরিষ্কার করা , দরিদ্রের চিকিৎসা আরও কতকি । সেই সময় সাধারণ সমাজ অনেক কটূক্তি করেছে । কেউ বলেছে ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী , কেউ বলেছে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তকরণ এর জন্য এত কিছু । সাধারণ সমাজ যাদের নিচু জাত বলে ঘৃণা করত , যাদের পাসে দাঁড়ানোর জন্য কেউ আসতো না তিনি তাদেরই সেবা করতেন। যারা কোন দিন এইসব মানুষকে মানুষ বলে ভাবেনি তারাই সবথেকে বেশি হিংসা করতে শুরু করল বিভিন্ন ভাবে সমালোচনা শুরু করল । তিনি কিন্তু দমে যাননি। বরঞ্চ তিনি ভারতীয় নাগরিকতা গ্রহণ করে মতিঝিলে একটি একটি ছোট্ট স্কুল স্থাপন করে তার কার্যক্রম আরও বাড়িয়ে দেন ।ফলে অনেক বড় বড় কর্মকর্তার নজরে আসেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তার কাজের স্বীকৃতি দিয়ে ছিলেন।
ওনার প্রথম দিগকার দিনগুলি খুবই কষ্টকর ছিল। সেই সময় তাঁর প্রচুর অর্থের অভাব ছিল।গরিব অনাহারী খাবার ও আবাসনের জন্য অর্থের যোগান দিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে।ধনিদের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হত। এইসব কাজ করতে অনেক সময় তিনি হতাশা গ্রস্থ হয়েছেন, একাকীত্ববোধ করেছেন , অনেকে তাকে সন্দেহের চোখে দেখেছে , এমনকি কেউ কেউ তাকে এমন কটূক্তি করেছে যেটা তাঁর কাছেও শোনার যোগ্য ছিল না ।অনেক সময় তাঁর নিজেরও মনে হত এতসব কিছু না করে যদি তিনি কনভেন্টের শান্তির জীবন কে বেছেনিতেন তাহলে বোধহয় সেটাই ভাল হত।
এরপর আস্তে আস্তে সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে তাঁর মিশনারির শাখা সমগ্র বিশ্বে ছরিয়ে পরে। তিনি নিঃশব্দে কাজ করতে করতে সমগ্র বিশ্ববাসীর নজরে আসেন । ভারত সরকার ১৯৬২ সালে ওনাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে এবং ১৯৮০ সালে দেশের সর্বচো সন্মান ভারতরত্ন প্রদান করে। ১৯৭৯ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরষ্কার পান।
তাঁর জীবনের আর একটি বিস্ময়কর ঘটনা হল, ১৯৮২ তে ইরানি সেনা ও ফিলিস্তানি গেরিলাদের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধে সাময়িক বিরতি ঘটিয়ে পরিস্থিতি অনুকুলে আনেন এবং যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকে থাকা ৩৭ জন শিশুকে উদ্ধার করেন ।এছারা রেড ক্রস সোসাইটির সাহায্যে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্ছলের হাসপাতাল থেকে প্রচুর কম বয়েসি রোগীদের সরিয়ে আনেন। ১৯৯৬ সালে পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশি দেশে মোট ৫১৭টি ধর্মপ্রচার অভিযান পরিচালনা করছিলেন।
মৃত্যু .............
১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয়, রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। ৫ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
কলকাতার আর্চবিশপ হেনরি সেবাস্তিয়ান ডি'সুজা বলেন, তেরেসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি এক ধর্মপ্রচারককে এক্জোর্সিজ্ম করতে বলেছিলেন। কারণ তার ধারণা ছিল, কোন শয়তান তেরেসাকে আক্রমণ করেছে।
মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিস অফ চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪,০০০; এর সাথে ৩০০ জন ব্রাদারহুড সদস্য ছিল। আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১০০,০০০ এর উপর। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০টি কেন্দ্রে ধর্মপ্রচারণার কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এসব কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছিল এইড্স, কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়।
Written by Suman sen
0 মন্তব্যসমূহ